বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের সেই আলোচিত ১নং ওয়ার্ডের ভূমিদস্যু ও আ’লীগের সাথে আতাতকারী হাবিবুর রহমান মিন্টু মেম্বার প্যানেল চেয়ারম্যান না হতে পেরে নতুন মিশন-ভিশণ নিয়ে মাঠে নেমেছে। আ’লীগ সরকারের পতনের পর রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবু পালাতক থাকায় পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে গত ২৫ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউপি সদস্যের ভোটাভুটির মাধ্যমে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়।
এতে মিন্টুকে পরাজিত করে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ সরদার প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপির সহ-সভাপতি
হাবিবুর রহমান মিন্টু বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সিকদারকে সাথে নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে পরেছে। এতে করে রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে দলের সাংগঠনিক কাঠামো দিন দিন দুর্বল হয়ে পরছে। এদের নেতৃত্বের প্রতি কমিটি গঠনের পরপরই অনাস্থা প্রকাশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
কারন দলের নিবেদিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পদবাণিজ্য করে বহু অপকর্মের হোতা রফিকুল ইসলাম এবং মিন্টু দের মতোন লোকদের দলে পদ-পদবী দিয়েছেন সম্প্রতি দলের সাংগঠনিক পদ স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান ও এ্যাড. আবুল কালাম শাহীন। এদের কারনেই কড়াপুর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোর রুগ্ন দশা। এরা বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনে সরকারী লোকদের সাথে আতাত করা ছাড়া কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই অবহেলিত নেতাকর্মীরা শিরিন, আবুল, শাহিনদের প্রতি সবটুকু অভিযোগ তুলছেন।
কেননা এই মিন্টু ২০২৩ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের পদ বাণিজ্যের বিতর্কিত ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে পদপ্রাপ্তির একদিনের মাথায় স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাম মোর্শেদ খান (৩৫) এবং মো. মিরাজ বেপারী (৩৪) নামের দুই ছাত্রদল কর্মীকে প্রকাশ্যে পিটিয়েছেন এই সর্বহারারা নেতা হাবিবুর রহমান মিন্টু এবং তার ছেলে রিয়াজ রহমান সবুজ (২৮)। বিমানবন্দর থানাথীন উত্তর কড়াপুর স্থানীয় বাইতুল মামুর জামে মসজিদের সম্মুখে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় ছেলেসহ মিন্টু মেম্বর এবং মো. সুজন (২১) নামের তাদের এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল সোমবার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা পদ বানিজ্যের মাধ্যমে বিতর্কিত সর্বহারা নেতা ও মাদক ব্যবসায়ীদের দলে স্থান দিয়ে কড়াপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা বিএনপি। এই কমিটিতে একাধিক মামলার আসামি বিতর্কিত হাবিবুর রহমান মিন্টু মেম্বরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
তাদের এই কিমিটির বিরোধীতা করে আসছিলেন স্থানীয় ছাত্রদল নেতা মো. গোলাম মোর্শেদ খান। এতে গোলাম মোর্শেদের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন আলীগের সাথে আঁতাতকারী বহুরূপী কথিত বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান মিন্টু এবং ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গোলাম মোর্শেদ খান মোটরসাইকেলযোগে সঙ্গী মো. মিরাজ বেপারীকে নিয়ে এলাকায় প্রবেশ প্রাক্কালে তার পথরোধ করে মেম্বার মিন্টু। এ সময় তার সাথে ছেলে রিয়াজ রহমান এবং ছেলের সহযোগী সুজনসহ আরও ৬/৭ জন উপস্থিত ছিল।
মিন্টু নির্দেশ দিলে তার ছেলে সহযোগীদের নিয়ে আ’লীগ সরকার কর্তৃক জুলুম নির্যাতনের শিকার ছাত্রদল নেতা গোলাম মোর্শেদ খানের উপর অতর্কিত হামলা করে মিন্টু গংরা। মারধরের একপর্যায়ে মোর্শেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হত্যার হুমকি দিয়ে সকলে স্থান ত্যাগ করে।
স্থানীয়রা গোলাম মোর্শেদকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলে দীর্ঘ চিকিৎসার পরে মোর্শেদ প্রাণে বেঁচে যায়।
এই ঘটনায় বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি গোলাম মোর্শেদ খান সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর থানায় তৎকালীন সময় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাবিবুর রহমান মিন্টু এবং তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বহু অঘটনের নায়ক মিন্টু মেম্বর বিএনপির পদধারী হলেও তার সাথে স্থানীয় ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংখ্যতা রয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা হাবিবুর রহমান মিন্টু প্রকাশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম জাকির এর পক্ষ নিয়ে কাজ করেন। তাকে প্রায় এস এম জাকিরের সভা সমাবেশে বক্তব্য গণসংযোগ করতে দেখা গেছে।
তাছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে কেক কাটা অনুষ্ঠানসহ আ’লীগের নানা অনুষ্ঠানে সক্রিয় ছিল মিন্টু। এছাড়াও ভূমিদস্যুতাসহ নানমুখী বেসামাল কান্ডে জড়িয়ে তিনি এলাকায় বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে পদপ্রাপ্তির একদিনের মাথায় ছাত্রদল নেতাকে পেটানো, ছেলেসহ গ্রেপ্তার ঘটনাবলীসহ তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা আছে।
এছাড়া তার ছেলের বিরুদ্ধেও মাদক কান্ডে জড়িত থাকাসহ নানামুখী অভিযোগ রয়েছে। সভাপতি রফিকুল ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। তার বিরুদ্ধেও বিগত সরকারের লোকজনের সাথে আতাত করাসহ অভিযোগের অন্ত নাই।