বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্সঃ বরিশালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ক্যাম্প ও বক্স ভাঙচুরের ঘটনা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন পর্যন্ত হওয়া তদন্তে দৃশ্যমান হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সেই সাথে হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত রয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার বিষয় সামনে আসেনি। সেই সাথে নগরের চৌমাথা ও নথুল্লাবাদ এলাকায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততাও তেমন একটা দৃশ্যমান হয়নি। ঘটনাগুলোর আগে উভয় স্থানে বাইরে থেকে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছিল। এরমধ্যে কারা প্যান্ট পড়া ছিল, লুঙ্গি পড়া ছিল, মাস্ক ও গামছা দিয়ে মুখ ঢাকা ছিল, বয়স্ক ছিল সবকিছু নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের প্রচুর ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিটি ঘটনাগুলোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমেও ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেই সাথে মাঠ পর্যায় থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির আরও বলেন, কারা বিশৃঙ্খলাকারীদের পেছন থেকে মদত দিয়েছে, কারা ঘটনাস্থলে নিয়ে এসেছে, আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, পানি দিয়েছে, টাকা দিয়েছে, ইটের টুকরো-লাঠিসোঁটা দিয়েছে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বরিশালের ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু বিষয়ের হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যরা। তাদের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করলেও, সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু হঠাৎ করেই ১৬ জুলাই প্রথমবারের মতো ব্রজমোহন কলেজ ও নথুল্লাবাদ এলাকায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় জায়গাতে পুলিশ সদস্যরা শারীরিকভাবে আহত হন। পাশাপাশি নথুল্লাবাদে প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়ে পুলিশ বক্স ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আর এর পরের দিন বুধবার নথুল্লাবাদে এবং তার পরের দিন বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। যে ঘটনায় পুলিশের ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পুলিশের মোটরসাইকেলসহ যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনার বিশ্লেষণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে। এরমধ্যে হামলার প্রতিটি ঘটনাস্থলে সাধারণ শিক্ষার্থীর বাইরে প্রচুর লোকের সমাগম কীভাবে ঘটলো সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আবার হামলার ঘটনায় সম্মুখে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে লুঙ্গি পড়া ও শিক্ষার্থী নয় এমন লোকদের উপস্থিতি বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে উপস্থিতির থেকে পুলিশের ওপর হামলার দিন অনেক বেশি লোকের উপস্থিতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও দেখা গেছে। এরমধ্যে মুখে মাস্ক নয়তো গামছা বাঁধা এবং কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো লোকের সংখ্যাই বেশি ছিল। যাদের আগে এ আন্দোলনের মধ্যে দেখা যায়নি।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, নথুল্লাবাদে পুলিশের ওপর হামলার পর দীর্ঘসময় ধরে চেষ্টা করেও হামলাকারীদের দুর্বল করে হটানো যাচ্ছিল না। এর কারণ খূঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ভবনের ছাদে অবস্থান ছিল হামলাকারীদের নির্দেশদাতাদের, তারা ভবনের ছাদ থেকে পুলিশের অবস্থান ও ভূমিকা বার বার নিশ্চিত করছিল। ফলে হামলাকারীদের নিবৃত করতে পুলিশ যেদিকেই অগ্রসর হতে চাচ্ছিল, ঠিক তার উল্টো দিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ তারপরও এগিয়ে যেতে চাইলে ছাদ থেকে সমানে ইট নিক্ষেপ করেছে আন্দোলনকারীদের নির্দেশদাতারা।
এমনকি নথুল্লাবাদে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা দেখে গণমাধ্যমকর্মীরাও বলছেন, পুলিশকে টার্গেট করেই হামলা করা হয়েছিল নথুল্লাবাদে। যেখানে ব্রজমোহন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের না দেখা গেলেও উঠতি বয়সের যুবকদের সঙ্গে কিছু বয়স্কদের লক্ষ্য করা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিয়া সড়কের এক বাসিন্দা জানান, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন জিয়া সড়ক ও শেরে বাংলা সড়ক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে যারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছেন, তারা সবাই বখাটে ও মাদকের সাথে জড়িত। আর লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দারা বলছেন, হামলাকারীদের মধ্যে বখাটেদের সাথে সাথে অনেক মাদ্রাসা ছাত্রদের দেখা গেছে। যদিও কলেজ এভিনিউ’র বাসিন্দারা বলছেন, সিএন্ডবি রোডে ওইদিন ও রাতে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর নথুল্লাবাদে হামলা চালিয়েছে মধ্যে বেশির ভাগই অপরিচত ছিলেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ও হামলায় আহত ফজলুল করিম বলেন, এখন পর্যন্ত ঘটনাগুলোর সাথে যারা জড়িত রয়েছেন, তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এ নিয়ে দক্ষিণ বিভাগের পাশাপাশি উত্তর বিভাগও কাজ করছে।
বরিশালের ঘটনার সাথে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্তরা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে যাদের বিষয়টি সামনে আসবে তাদেরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে, তবে বিনা কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না।