বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
এম জাফরান হারুন, পটুয়াখালী:: জীবনের শুরুতে সমুদ্রে ধরেছেন পোনা মাছ, করেছেন হকারি। জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতার হাত ধরে উত্থান ঘটে রাজনীতিতে। তারই আর্শীবাদে শুরু করেন জমি বেচা কেনার দালালি, বনে যান কোটিপতি। পেয়ে যান মহিপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতির পদ। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন, ব্যাপক অর্থ খরচ করে প্রভাব খাটিয়ে হয়ে যান পৌর মেয়র।
একাধিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কিনে গেলো ২৬ জানুয়ারি বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এরপরই একক আধিপত্য বিস্তার করেন কুয়াকাটা পৌরসভায়, করেন নিয়োগ বাণিজ্য, নামে বে-নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করিয়ে বাগিয়ে নেন কুয়াকাটা পৌরসভার বিভিন্ন কাজ। অনুসন্ধানে এমনই তথ্য বেরিয়ে আসে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সদ্য অপসারিত পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গেলো ১৮ জানুয়ারি পৌরসভার ৮টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য পৌর মেয়রের সাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় কয়েকটি পত্রিকায়। বিজ্ঞপ্তিতে কুয়াকাটা পৌরসভা বরাবর পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫০০ টাকা করে জমা দিতে বলা হয়। তবে বিগত ৮ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি নিয়োগ পরীক্ষা। অভিযোগ রয়েছে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর আগেও নিয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন তিনি। স্বজনপ্রীতি করে এক কাউন্সিলরের ছেলেসহ নিয়োগ দিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনকে। এসব বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে সরকারি জমি দখল করে করেছেন আবাসিক হোটেল। ওই আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে রয়েছে অবৈধ দেনদরবারের জন্য তার নিজস্ব অফিস। পৌর সভার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন সরকারি খাসজমি। মসজিদের জমি নিয়েও করেছেন নয় ছয়।
জানা গেছে, উপজেলা শহরে তার বহুতল ভবনসহ রয়েছে হোটেল। এছাড়াও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আ. বারেক মোল্লাকে কোণঠাসা করে রাখাসহ তার মেজো ভাই লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লাকে দমনে মোটা অংকের টাকায় সন্ত্রাসী ভাড়া করে হাত পা গুঁড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় এতদিনে মুখ খোলেনি কেউই।
ইউপি চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর আমার বাবা ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীত করার, আনোয়ার হাওলাদার লোক ভাড়া করে আমার বাবার হাত পা গুঁড়িয়ে দেন।
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, আনোয়ার হকার থেকে জাতীয় পার্টির নেতা ভূমি দস্যু রুহুল আমিন আমিনের দোসর হিসেবে কাজ করতেন। এলাকায় বিভিন্ন জমি নামমাত্র মূল্যে বায়না রেজিস্ট্রি করে দখল করে নিতেন। এছাড়াও তিনি পৌর মেয়র থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন নামে বে- নামে লাইসেন্স করিয়ে বাগিয়ে নিতেন লক্ষ লক্ষ টাকা। পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তা ঘাট নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে করে ব্যাপক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সম্প্রতি কুয়াকাটা পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে ভাঙচুর ও বিস্ফোরক আইনে সাবেক দুই পৌর মেয়রসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ ও ১০০ জনকে অজ্ঞাত রেখে মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক আইডিতে নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে তুলে ধরেন। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নেটিজেনসহ সচেতন মহলে।
এদিকে আনোয়ার হাওলাদারের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলে ২০২৩ সালে দুদকে অভিযোগ দেন এক ব্যক্তি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করছে দুদক।
পটুয়াখালী জেলা দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাসেল রনি বলেন, সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে আবাসিক হোটেল, নামে বে-নামে বিভিন্ন সম্পদের অভিযোগে আমাদের অনুসন্ধান চালছে, অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সদ্য অপসারিত পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার আমলে কোন প্রকার দুর্নীতি অনিয়ম হয়নি। বেঁড়িবাধের বাহিরে পাউবোর জমিতে আবাসিক হোটেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সেটি তার রেকর্ড সম্পত্তি বলে দাবি করেন।
আনোয়ার হাওলাদার আরও বলেন, আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। ২০১৫ সালের পর আমি কোন সম্পদ করিনি আমার সমস্ত সম্পদের বিবরণ নির্বাচনী হলফ নামায় দেওয়া আছে।