বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
একাধিক মামলার আসামি খুলনার সংসদ সদস্য কুয়াকাটায় গ্রেফতার  মহিষ বাধাকে কেন্দ্র করে মেহেন্দিগঞ্জে একজনকে পিটিয়ে জখম। মঠবাড়িয়ায় মন্দিরের মাটি কাটা কে কেন্দ্র করে বাপ ছেলেকে পিটিয়ে জখম। মেহেন্দিগঞ্জে শাশুড়ি কর্তৃক মেয়ে জামাইয়ের উপর হামলা। বাউফলে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মৎস্যজীবি দলের সভাপতিকে দল থেকে অব্যাহতি বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৪ নেতা-কর্মীর জামিন মঞ্জুর কাঠালিয়ায় যড়যন্ত্রমূলক হত্যা মালায় দুই ব্যক্তিকে আসামী করে হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন নগরীতে চুরির প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে পিটিয়ে জখম  পাথরঘাটা দেবর কর্তৃক বড় ভাবিকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ।
ভাষা সৈনিক ইউসুফ কালু আর নেই,বিভিন্ন মহলের শোক

ভাষা সৈনিক ইউসুফ কালু আর নেই,বিভিন্ন মহলের শোক

ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফ কালু (৯১) আর নেই।  তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সন্ধ‌্যা ৫টা ৪০ মি‌নি‌টে তিনি ওই হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করনে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ওবায়দুর রহমান সোহাগ।

এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পা‌নি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জা‌হিদ ফারুক শামীম, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, ব‌রিশাল জেলা প‌রিষদ চেয়ারম‌্যান মইদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, শহীদ আব্দুর রব সের‌নিয়াবাত ব‌রিশাল প্রেসক্লাব সহ সামা‌জিক, সাংস্কৃ‌তিক ও রাজ‌নৈ‌তিক সংগঠ‌নের নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এস‌সি‌জিএম বিদ‌্যাল‌য়ে গার্ড অব অনার, প‌রে জানাযা এবং সর্বস্ত‌রের মানুষ শ্রদ্ধা নি‌বেদন কর‌বেন ইউসুফ কালুর মর‌দে‌হে। এরপ‌রে তার গ্রা‌মের বা‌ড়ি ঝালকা‌ঠি জেলার রাজাপুর উপ‌জেলার কানুদাসকা‌ঠি গ্রা‌মের মিঞা বা‌ড়ি‌তে তা‌কে দাফ‌নের কথা জা‌নি‌য়ে‌ছেন ছে‌লে সোহাগ।

১৯৩১ সালের ১৭ জানুয়ারী বর্তমান ঝালকাঠী জেলার রাজাপুরের কানুদাসকাঠী মিয়াবাড়িতে ইউসুফ কালুর জন্ম। বাবা ওবায়দুল করিম (রাজা মিয়া) ও মা ফাতেমা খাতুন। ৩ ভাই, ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবা রাজা মিয়া প্রথমে ১৯২০ সালের দিকে কোলকাতা পোর্ট কমিশনে চাকুরী করতেন। পরবর্তীতে চাকুরী ছেড়ে দেন এবং রাজা রায় বিহারীর জমিদারীর নায়েব নিযুক্ত হন। আমুয়া, ভান্ডারিয়া, কানুদাসকাঠী অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ভাষা সংগ্রামী ইউসুফ হো‌সেন কালুর পড়াশুনার প্রথম পাঠ গ্রামের পাঠশালায়। এরপর এসে ভর্তি হন বরিশাল ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে ( বি.এম স্কুল )।

১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে দেখেছেন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন তুঙ্গে থাকার বিষয়টি। তখন থেকেই তিনি এর সাথে জড়িয়ে পরেন।  সেসময়েই একদিন  প্রগ্রেসিভ ছাত্রফ্রন্ট এর নেতা এমায়দুল এর নেতৃত্বে মিছিলে যোগদেন এবং পুলিশের লাঠির আঘাতে প্রথম দিনেই আহত হন। এরপর মেট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৫১ সালে আইএ ভর্তি হন বিএম কলেজে কমার্স বিভাগে। তখন থেকে ভাষা সংগ্রামে সম্পৃক্ততা আরো বেড়ে যায়।

তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ গোলাম কিবরিয়াকে আহবায়ক করে বিএম কলেজে গঠন হয় ২৫ সদস্যের ভাষা সংগ্রাম পরিষদ। যেখানে তাকেও কমিটির সদস্য করা হয়। তবে কিছুদিন পরে আন্দোলনে দেশ উত্তাল হয়ে উঠলে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট বৃহত্তর বরিশাল ভাষা সংগ্রাম পরিষদে যুক্ত করা হয় তাদের।

ভাষা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে যুক্ত হয় ১৯৫৪ সালের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে বরিশালে প্রচারনায় আসে পাকিস্থান মুসলিম লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খান আব্দুল কাইউম। তখন ইউসুফ কালু ও তার সহযোদ্ধারা রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও স্বৈরাচারী সরকার নিপাত যাওয়ার দাবীতে কালো পতাকা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই সময় পুলিশের সঙ্গে ঘটে তুমুল সংঘর্ষ হলে শহরের কাউনিয়ার নিবাসী মালেক নামে একজন মারা য়ায়। এই ঘটনায় ইউসুফ কালুসহ ৩৫ জনের মত গ্রেফতার হন। ২২ দিন পর জামিনে বের হয়ে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের হয়ে কাজ শুরু করেন তারা।

প্রথম জীবনে শিশু কিশোর সংগঠন মুকুলফৌজ করা এই প্রবীন ব্যাক্তিত্ব ৬৯’র গনঅভ্যুত্থান সহ প্রতিটি আন্দোলনেই দেশ ও মানুষের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে, দেশের হয়ে মুক্তিযোদ্ধা খাতায় নাম লেখান। ৭১’র ১৪ মে কোলকাতা লালবাজার চলে যান। সেখানে বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির সহযোগিতায় হাসনাবাদ, হিংগলগড়, টাকি হেড কোয়াটার থেকে প্রশিক্ষন নেন। পরবর্তীতে ৯নং সেক্টরের অধীনে কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন নুরুল আলম ফরিদ সম্পাদিত রনাঙ্গনের মুখপত্র ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকার পরিচালকদের একজন ছিলেন। ৭১ সালে তার বাড়ি লুট হয়। তখন দলিলপত্র,ব্যক্তিগত কাগজপত্র সবকিছুই খোয়া যায় তার আর নষ্ট হয়ে যায় বহু স্মৃতি। মহম্মদ ইউসুফ কালু কখনো রাজনীতিক, কখনো সাংবাদিক, কখনো সুধী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা, বহু গুনে গুনান্বিত একজন মানুষ।

শিক্ষা জীবনের প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন তিনি। ৫২ সালে যোগ দেন ছাত্রলীগে। পরে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে। তিনি স্বৈরাচার বিরোধী ও প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন সক্রিয়ভাবে।

১৯৬২ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথমে আজাদ ও পরে দৈনিক পয়গামের বরিশাল সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন। বরিশাল প্রেসক্লাবের ( বর্তমানে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব ) সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল খেলায় পারদর্শী তিনি বরিশাল ক্রীড়া সংস্থারও সদস্য ছিলেন ১৯৬২-১৯৭৩ পর্যন্ত।

Please Share This Post in Your Social Media




পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
DEVELOP BY SJ WEB HOST BD
Design By Rana